কলকাতার বারোয়ারি বারোয়ারির কলকাতা

(0 পর্যালোচনা)
লিখেছেন/সম্পাদনা করেছেন
গৌতম দত্ত
প্রকাশক বইদেশিক

মূল্য
₹500.00
পরিমাণ
মোট দাম
শেয়ার করুন

কলকাতার বারোয়ারি বারোয়ারির কলকাতা 

গৌতম দত্ত  

একচালা থেকে দুর্গা ও তাঁর পরিবার বিভক্ত হলেন পাঁচচালায়। সত্যিই কি নেপথ্য কারিগর সুভাষচন্দ্র বসু? আর্ট কলেজের ধারকাছ দিয়েও না গিয়ে ভাস্কর সুনীল পালের ছাত্র এমন কী জাদু সৃষ্টি করলেন যা দেখতে ছুটে এলেন সত্যজিৎ রায়ের মত স্রষ্টারা? তখনও কি রাজনৈতিক নেতারা পুজো উদ্বোধন করতেন? সমসাময়িক 'ভিলেন' এর আদলে অসুরের মুখাবয়ব নির্মাণ কি হালের ফ্যাশন? শরণার্থী উদ্বাস্তুদের খিদের কান্না কি ঢাকতে পারছে পুজোর ঢাক? 'অমৃত বাজার পত্রিকা', 'সোমপ্রকাশ', 'জ্ঞানান্বেষণ', 'যুগান্তর' প্রভৃতি মন্থনে পাওয়া উত্তরগুলি নিছক পুজোর ইতিহাসেই থেমে থাকেনি, সন্ধান দিয়েছে বহু অমৃত-ভাণ্ডারের। 

-------------------------------------

সাবেকি একচালা থেকে আর্টের ঠাকুর, এই ভিন্নতার পথ পাড়ি দিতে নগর কলকাতার বেশ খানিকটা সময় লেগেছিল। সেই সময়জুড়ে স্থির ছিল না তৎকালীন রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক পরিস্থিতিও। বলাই বাহুল্য, সে ছায়া পড়েছিল বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবেও। দৈনিক বাংলা এবং ইংরেজি সংবাদপত্র থেকে উদ্ধৃত প্রতিবেদনের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে ওঠে বর্তমানের থিমপুজোর সূচনায় দিনগুলি কেমন ছিল। কুমোরটুলির মৃৎশিল্পী, প্রতিমার সাজের বিবরণ, প্যান্ডেলওয়ালা, পূজোকর্তাদের পাশাপাশি উৎসাহী পাঠক খুঁজে পাবেন সমসাময়িক বাজারদর, তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনার উল্লেখ। উৎসবমূখর চারদিনের আবহাওয়া, পুজোর সিনেমা, নাটক, বিজ্ঞাপন বাদ যায়নি প্রায় কিছুই। সংক্ষেপে বলাই যায়, লেখক ব্রিটিশ উপনিবেশিক সময়কাল থেকে স্বাধীনতা ছুঁয়ে ১৯৮৫ অবধি যাত্রাপথের এক শারদকালীন সমাজচিত্র এঁকেছেন।

-------------------------------------

২০ অক্টোবর ১৯৫০। 'যুগান্তর দৈনিক' জানাচ্ছে...

এই সমস্ত বারোয়ারির প্রতিমা গঠন আর সজ্জার রীতিতে সাবেককালের ভাব আর নেই। তাঁর মতে সে সব প্রতিমা নাকি শুধু মাত্র বনেদি বাড়ির প্রতিমাতেই দেখা যাচ্ছে। একটা গোল আকারের অথবা তিনকোনা চালচিত্র, তাঁর নীচে সিংহবাহিনী দুর্গা। দুর্গা ডানদিকে লক্ষ্মী গণেশ আর বাঁ দিকে সরস্বতী আর কার্তিক পাশাপাশি একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে তৈরি। 

এই সব প্রতিমার মুখের গড়ন নাকি পানের মত। কারো আবার অল্প গোলাকার। আকর্ণবিস্তৃত ঘন কালো ভ্রু’র নিচে টানা টান বিশাল আকারের চোখ, ঠোঁটে হাসির রেখা। অসুর আর সিংহ’র মধ্যে হালকা সংগ্রামের ছায়া দেখা গেলেও পেশী আর হাতের সেই ফুলে ওঠা সাবেকি শিরাগুলি অন্তর্হিত। এ এক নতুন ধারা—যাকে উদ্যোক্তারা বলছেন ‘প্রাচ্য পদ্ধতি’।

“কিন্তু প্রাচীন শিল্পকলার রীতি, ভাব ও গঠন কৌশলের সঙ্গে যাঁদের পরিচয় আছে, তাঁদের চোখে অধিকাংশ নবীন শিল্পীর এই নতুন সৃষ্টি অভিনব ঠেক্‌বে, কারণ ভারতীর রূপকলার পিছনে রূপকে ছড়িয়ে অরূপে যাবার, চিত্রকে ছাড়িয়ে বিচিত্রকে অনুভব করবার মূর্তকে পিছনে ফেলে অমূর্তকে হৃদয়ে জাগাবার যে উপলব্ধি, উপযোগ এবং প্রেরণা আছে, অত্যাধুনিক এই সব অধিকাংশ শিল্পকলায় সে রস অন্তর্হিত।

…—এই ভাবের প্রেরণায় যেখানে রূপসৃষ্টির আয়োজন হ'য়েছিল—আজ এই যান্ত্রিকযুগের অতিবাস্তব পরিবেশে তাকে সুষ্ঠুভাবে প্রকাশ করা কঠিন বৈকি।

…তাই আজ কলকাতার সার্বজনীন দুর্গোৎসব মণ্ডপের শতকরা ৯৮টিতে সিংহবাহিনীর সিংহকে চিড়িয়াখানার জীবন্ত সিংহের মত করে গড়া হয়েছে। যেহেতু মহিষাসুর ভীষণ বলশালী, অতএব তাকে পেশীবহুল ব্যায়ামবীর না করলে যে সে দর্শকচিত্তে প্রশংসা ও বিস্ময় সৃষ্টি করতে পারবে না। লক্ষী, সরস্বতী, গণেশ, কার্তিক সকলে জননীর সঙ্গে থাকতে নারাজ

…………………………… আলোকোজ্জল দৃশ্যপটের সামনে বিভিন্ন ভঙ্গীতে এই সমস্ত মূর্তিকে দৃষ্টি-আকর্ষক ও বিস্ময়কর ঠেকে—মনে হয় আনন্দকান্তি মানবমানবীর দল দেবদেবীর লীলাভিনয়ে রত।

আহিরীটোলা সর্বজনীন দুর্গোৎসবে শ্রীরামচন্দ্রের লঙ্কাপুরীতে অকাল-বোধনের আভাস দেওয়া হইয়াছে। প্রতিমার পিছনে দৃশ্যপট এবং বিচিত্রবর্ণের বৈদ্যুতিক আলোকপ্রক্ষেপে লঙ্কার বেলাভূমিতে সমদ্রের লীলাঞ্চল তরঙ্গ ভঙ্গের অভিনব প্রয়াস হ’য়েছে। এই পটভূমিকায় আক্রমণোদাত সিংহ ও ক্রুদ্ধ অসুরের পৃষ্ঠে দৃপ্তভঙ্গীতে দণ্ডায়মান বিচিত্রবসন দশভুজা দর্শকচিত্তে স্বাভাবিক বিস্ময় আর বিভ্রম সৃষ্টি করেছে।... উদ্বাস্তু তরুণ শিল্পী শ্রীরমেশ পালের এই প্রয়াসে শিল্পগত বহু ত্রুটিবিচ্যুতি সত্ত্বেও মুন্সিয়ানার পরিচয় রয়েছে”।

সমালোচনায় যুগান্তর জানাচ্ছে যে, দুই-এর পল্লীর মূর্তির পেছনে ‘রবিকররঞ্জিত তুহিন’ হিমালয়ের দৃশ্যপটে দাঁড়িয়ে থাকা শিখরগুলি সুন্দর। কিন্তু ধ্যান আর কল্পনার বিচিত্ররসে তৈরি প্রতিমা মূর্তি তৈরিতে কি অসংগতি নেই ?

গৌরীবেড়ে’র ঠাকুরের মুখে কমনীয় কান্তি আর সিংহ-অসুরের আসল রূপ প্রকাশিত। বৈদ্যুতিক আলো ওই সমস্ত দৃশ্যপটের ওপর ফেলে বাস্তবতা তৈরির ধূম লেগেছে। কিন্তু দেবদেবীর রূপ আর তাঁর সজ্জা রচনায় যেভাবে আমাদের প্রাচ্য রীতিকে অনুভবের অভাব রয়েছে। 

হাটখোলা সর্বজনীন। ১৯৫২

 সংবাদদাতা সেদিন আরো জানাচ্ছে-

হাটখোলা সর্বজনীনের দুর্গা প্রতিমা যেভাবে তৈরি করেছেন তাতে বোঝা যায় যে প্রাচ্য শিল্পকলার সাথে শিল্পীর পরিচিত। বিশেষ করে প্রতিমা নির্মানে পট এবং বাংলার চিরাচরিত ভাবকে শিল্পী ফুটিয়ে তুলেছেন সুচারুভাবে। আশা করা যায় তাঁর নির্মিত এই হাটখোলার প্রতিমা কলকাতার শিল্পরসিক মহলের মন জয় করবে। 

এমনি আরো নানান ঘটনা নিয়েই কলকাতার দুর্গাপুজো – একচালা থেকে ‘শুদ্ধ সূচী, সুস্থ রুচি’ – ধারাবাহিক পরিক্রমায় বই আর সংবাদপত্র খুঁড়ে দেখা এক সচিত্র দলিল।

পর্যালোচনা ও রেটিং

0 মোট 5.0 -এ
(0 পর্যালোচনা)
এই বইয়ের জন্য এখনও কোন পর্যালোচনা নেই

সংশ্লিষ্ট বই

বই সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা (0)

প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য

অন্যান্য প্রশ্নাবলী

কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি