সুন্দরবন সমগ্র
শিবশঙ্কর মিত্র
পৃষ্ঠা সংখ্যা : : 472
তাঁর সুন্দরবন গ্রন্থের জন্য সেই ১৯৬২ সালেই শিবশঙ্কর মিত্র পেয়েছিলেন ভারত সরকারের দেওয়া শ্রেষ্ঠ শিশুসাহিত্যের পুরস্কার। এটি নিশ্চিত সম্মানজনক এক স্বীকৃতি। কিন্তু তাঁর সুন্দরবনে আর্জান সর্দার যাঁদের পড়া, তারা নিশ্চিত জানেন যে, এই পুরস্কারের থেকেও বড় পুরস্কার তিনি আগেভাগেই পেয়ে গিয়েছেন। সে পুরস্কার পাঠকের সাদর স্বীকৃতির পুরস্কার। বলা বাহুল্য, শেষাবধি লেখক বেঁচে থাকেন পাঠকের হৃদয়েই। শিবশঙ্কর মিত্র সেদিক থেকে বস্তুতই সৌভাগ্যবান। ছোটদের জগতে পদার্পণমাত্রই তিনি পেয়েছেন স্বাগত সমাদর। পেয়েছেন চিরকালীন স্বীকৃতি। পরবর্তী পুরস্কারগুলি এই স্বীকৃতির উপরেই মুদ্রিত শিলমোহর মাত্র। তাঁর গ্রন্থের সংখ্যা কম নয়। বিষয়-বৈচিত্র্যেও সেসব গ্রন্থ উল্লেখের যোগ্য। কিন্তু প্রতি লেখকেরই যেমন থাকে সব-ছাপানো একেকটি বৈশিষ্ট্যময় দিক বা বিষয়, তাঁর ক্ষেত্রেও রয়েছে। সেই বিশেষ বিষয় হল- সুন্দরবন। সেই-যে এক কবিতায় প্রেমেন্দ্র মিত্র লিখেছিলেন- "আমাদের সীমা হল/দক্ষিণে সুন্দরবন/উত্তরে তরাই।" বাংলা সাহিত্যের সীমাকেও এই দক্ষিণে সুন্দরবনের দিকে অকৃপণভাবে যাঁরা বাড়িয়ে দিয়েছেন, নিঃসন্দেহে শিবশঙ্কর মিত্রের নাম তাঁদের অন্যতম রূপে বিবেচিত হবে। শুধু সুন্দরবনের পটভূমিকাতেই তিনি লিখেছেন পাঁচ-পাঁচটি বড় মাপের উপন্যাস। এ ছাড়াও বিস্তর ছোটগল্প। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের ফসল সেই সমুদয় রচনা দুই মলাটের মধ্যে এনে প্রকাশিত এই অসামান্য গ্রন্থ, সুন্দরবন সমগ্র। সুন্দরবন শুধু সুন্দরই নয়, একইসঙ্গে দারুণ রহস্যাবৃতও বটে। জল আর জঙ্গল, মানুষ আর হিংস্র পশুপ্রাণী, সংস্কার আর কিংবদন্তি, রোমাঞ্চ আর শৌর্যময় কাহিনি- এই ভূখণ্ডকে চির আকর্ষণীয় আর চির রহস্যময় করে রেখেছে। শিবশঙ্কর মিত্র সুন্দরবনকে শুধু যে কাছ থেকে দেখেছেন তাই নয়, দেখেছেন নানান দিক থেকেও। আর সেই অভিজ্ঞতাকেই জীবন্ত করে তুলেছেন গল্প-উপন্যাসে। তাঁর লেখায় যেসব ঘটনা ও ছবি তা একটিও অলীক নয়। অনেক ক্ষেত্রে চরিত্রের নামগুলি পর্যন্ত অবিকল। কেউ এখনও জীবিত, কেউ-বা পরলোকে। কিন্তু সাহিত্যের সত্য এবং বাস্তবের সত্যের এক অসামান্য মিশেলে যে-জগতে তাঁদের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়েছেন লেখক, সেখানে তাঁরা থেকে যাবেন চিরকালের জন্য।
লেখক পরিচিতি :
জন্ম: ২০ অক্টোবর, ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দ। খুলনায়। অধুনা বাংলাদেশের অন্তর্গত। প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এ। লাইব্রেরি সায়েন্সেও স্নাতক। ছাত্রজীবনেই ঝাঁপ দেন স্বদেশি আন্দোলনে। বিপ্লবী 'যুগান্তর' দলে যোগ ১৯২৬-এ। স্বাধীনতা সংগ্রামী-রূপে আট বৎসর কারাবন্দি-১৯৩১ থেকে ১৯৩৮ পর্যন্ত। কারামুক্তির পর যোগ দেন ভারতীয় কম্যুনিস্ট পার্টিতে। প্রথম বই ১৯৪১-এ। লেনিনের সংক্ষিপ্ত জীবনী। বাংলা ভাষায়। ১৯৪১ থেকে ১৯৪৮, কাজ করেছেন যুগান্তর ও অমৃতবাজার পত্রিকায়, রেফারেন্স এডিটর রূপে। ট্রেড ইউনিয়নের জঙ্গী নেতা-রূপে দ্বিতীয়বার কারাবাস, ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় পাঠাগারে সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদে যোগ দেন ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে। ধাপে ধাপে উন্নতির পর অ্যাকটিং লাইব্রেরিয়ান হিসেবে অবসৃত ১৯৭০-এ। এরই মধ্যে লেকচারার ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি সায়েন্স-এ। অবসূত জীবনে গোর্কি সদনের লাইব্রেরিয়ান রূপে কাজ করেছেন ১৯৮৬ পর্যন্ত। বহু গ্রন্থের প্রণেতা। ইংরেজিতে লেখা একটি বইয়ের জন্য পেয়েছেন সোভিয়েত দেশ নেহরু পুরস্কার। ছোটদের জন্য রচিত বাংলা গ্রন্থের জন্যও পেয়েছেন দুটি পুরস্কার। তার একটি ভারত সরকার প্রদত্ত। ১৯৬২-তে, শ্রেষ্ঠ শিশুসাহিত্য রূপে সুন্দরবন গ্রন্থে। শখ: খবরের কাগজ পড়া। এবং সময় সুযোগ হলেই সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে দিনযাপন।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি