সপ্তপর্ণ
ইন্দ্রজিৎ মৈত্র
(আবহমানকাল ব্যাপী রাঢ় ও বঙ্গদেশের বক্ষে বিকশিত ধর্মীয়চেতনার পটভূমিকায় রচিত ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস)
উপন্যাসের পটভূমিকা :
তিনটি খণ্ডে পরিব্যাপ্ত উপন্যাসের বহমান কাল হল প্রধান চরিত্র। আপন আপন ঐশ্বর্য দ্বারা সেই ভারতীয় কালপ্রবাহকে শুদ্ধ করেছেন যুগে যুগে বিভিন্ন মহামানব।
প্রাচীন যুগঃ
সুদূর কোন অতীতে রাঢ়-দেশের মৃত্তিকা বক্ষে বিচিত্র এক সাধনার বীজ বপন করা হয়েছিল। কী সেই রহস্যময় সত্য, যার সন্ধানে বিশ্বের সর্বাধিক প্রাচীন ধর্ম- শ্রমণধর্মের (বর্তমানে যা 'জৈনধর্ম' রূপে পরিচিত) চতুর্বিংশতিতম বা সর্বশেষ তীর্থঙ্কর বর্ধমান মহাবীরের তাঁর পূর্বের অন্তত উনবিংশতিজন তীর্থঙ্করের পদাঙ্ক অনুসরণপূর্বক সুদূর আর্যাবর্ত থেকে রাঢ়দেশে সাধনা সমাপ্ত করার উদ্দেশ্যে পরিব্রাজকরূপে আগমন।
প্রাক-মধ্যযুগঃ
এই যুগে কাহিনির যাত্রাপথ রাঢ়-গৌড়-বঙ্গে বৌদ্ধধর্মের ক্রমবিবর্তনের আলোয় প্রেম ও ভক্তিসাধনার সূচনার ইতিহাস রচনার পরিপ্রেক্ষিতে। বৌদ্ধধর্মের জ্ঞানয়োগের প্রায় শেষ প্রতিভূ চৌরাশিতি সিদ্ধাচার্যের শ্রেষ্ঠতম অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের তিব্বতযাত্রার প্রকৃত কারণ। ও বিবরণ।
তার প্রায় দুইশত বৎসর পর দেশের এক জটিল রাজনৈতিক আবর্তের ঘূর্ণিপাকে গীতগোবিন্দ'র কবি সহজ সাধক জয়দেব গোস্বামীকে উত্তর রাঢ়ের কেন্দুবিদ্ধ ত্যাগ করে অবশেষে বৃন্দারনে আশ্রয় নিতে হয়েছিল, কিন্তু কেন?
এর আনুমানিক আরও দুইশত বৎসর পরবর্তীকালে সহজিয়া প্রেম-সাধনার কবি শ্রীচণ্ডীদাসকে কেনই বা দেশের ধর্মযুদ্ধের প্রথম শহীদ আখ্যা দেওয়া যেতে পারে?
এ-ব্যতীত দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতাব্দীতে রাঢ়-গৌড়-বঙ্গের এক গুরুতর ধর্মীয় সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে 'বশিষ্ঠ' নামধারী যে তন্ত্রসাধক চীন বা তিব্বতদেশ থেকে স্বয়ং বুদ্ধের কোনো অবতারের নিকট শুদ্ধ বৌদ্ধ তন্ত্র সাধনা বা 'চীনাচার' শিক্ষা করার পর উত্তর রাঢ়ের প্রাচীন তারাপীঠ শ্মশানে তন্ত্রসাধনায় সিদ্ধিলাভ করেন, তিনি কি কিংবদন্তি অনুসারে রামায়ণের রঘুকুলগুরু স্বয়ং শ্রীবশিষ্ঠ মুনি? কিন্তু কালানুসারে রামায়ণের ত্রেতাযুগ বুদ্ধজন্মের বহুপূর্বেই।
মধ্যযুগ থেকে বিংশ শতাব্দীঃ
শ্রীচৈতন্যের সাধন জীবনের সূচনা এবং তাঁর লৌকিক জীবনের পরিসমাপ্তি সবই রহস্যময়। মধ্যযুগে বাঙলাদেশে শ্রীচৈতন্যদেবের নেতৃত্বে নবজাগরণের এক সার্থকরূপ আমরা দেখতে পাই। তিনি বাঙালির জাতীয় এবং সামাজিক আন্দোলনের প্রথম অধিনায়ক।
বিংশ শতাব্দীতে রবীন্দ্রনাথের সাধনজীবনকে তুলে ধরার প্রয়াস অপর এক প্রচ্ছন্ন সন্তসাধক ক্ষিতিমোহন সেন-এর জীবনের আলোয়। রবীন্দ্রপ্রতিভার মধ্যগগনে কোন সে পরশপাথরের স্পর্শে অবশেষে তিনি লাভ করেন তাঁর মরমিয়া সাধনার সিদ্ধি, সৃষ্টি হয়। গীতাঞ্জলি কাব্যত্রয়ী।