সাম্বালা-তন্ত্রের আলোয় (তৃতীয় খণ্ড)
লেখক - রীনা হাজরা
পারস্য জয় করে সম্রাট আলেকজাণ্ডার এগিয়ে গেছেন পূর্ব দিকে হিমালয়ের পাদদেশে। সিন্ধু অঞ্চলের একটার পর একটা খাড়া পাহাড় আর উপত্যকা পেরিয়ে এসেছেন তিনি। সেনাপতি হেফাস্টিয়নের তৈরী করা ব্রিজের উপর দিয়ে সিন্ধু পার হলেন সম্রাট।
সময়টা ছিল ৩২৬ সাধারণ পূর্বাব্দের মে মাসের গরমের দিন। উদ্ভাণ্ডপুর এসে পৌঁছলেন সম্রাট আলেকজাণ্ডার। ভবিষ্যতে যার নাম হবে ওহিন্দ।
আর মাত্র চল্লিশ মাইল। সম্রাট স্বপ্ন মাখা চোখে তাকিয়ে আছেন সামনে। স্বপ্ন দেখেন তিনি এই পৃথিবীর অধীশ্বর হবার। "বসুন্ধরার ওই শস্যপূর্ণ শ্যামল অঞ্চল, বিশাল এক দেশ আজ আমার সামনে। তারই অংশ সেই সম্পদশালী তক্ষশীলা যার ধন, ঐশ্বর্য, জ্ঞানের খ্যাতি দিগন্তস্পর্শী।"
তক্ষশীলার রাজা অম্ভি শুনেছেন সুদূর গ্রীস থেকে পরাক্রমশালী দিগ্বিজয়ী রাজা এগিয়ে আসছেন তাঁর রাজ্যের দিকে। দূত পাঠিয়েছিলেন রাজা অম্ভি। রাজা অম্ভির শান্তির প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে তক্ষশীলা থেকে সম্রাট এগিয়ে গেলেন আরও পূর্ব দিকে।
তক্ষশীলা শহরের বাইরে সাধনা করেন নগ্ন সাধুরা। তাঁদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ সন্ন্যাসী দণ্ডীস্বামীর সঙ্গে আলেকজাণ্ডারের কাল্পনিক কথোপকথনের কথা লিখেছেন দার্শনিক ওনিসিক্রিটাস।
পাহাড়ের উপরে সম্রাট গ্রীক দেবতা হেরাক্লিসকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই অঞ্চলের মানুষ এক কৃষ্ণবর্ণ লৌকিক দেবতার পূজা করে। সেই কৃষ্ণ বাসুদেব গ্রীসের দেবতা হেরাক্লিসের যেন প্রতিরূপ।
হাইডাস্পেস নদীর ওপারে তখনকার ভারতের ছোট ছোট রাজ্যগুলো জয় করে সম্রাট এগিয়ে যাবেন আরও পূর্বে দূরে নন্দ বংশের শাসিত মগধ সাম্রাজ্যের দিকে।
শীত পার হয়ে বাতাসে এখন বসন্তের স্পর্শ। হিমালয়ের পাহাড়ী অঞ্চলের নীচু অংশে আঠারোশ' ফুট উঁচু তক্ষশীলা থেকে ঝিলাম নদীর তীরে এসে পৌঁছল সম্রাটের বাহিনী। তাঁর জয়যাত্রায় যুক্ত হয়েছে তক্ষশীলার কিছু সৈন্য।
এই সেই অঞ্চল যা ভবিষ্যতে একদিন মোগল বাদশা জাহাঙ্গীরের সময় হরণপুর নাম নেবে।
বড় বড় নৌকাতে চড়ে হাইডাস্পেস বা ঝিলাম নদী পার হতে হবে সম্রাটের অশ্বারোহী বাহিনীকে। বর্ষায় হিমালয়ের হিমবাহ গলে নেমে আসা জলে ফুলে উঠেছে ঝিলাম। ওপারে দাঁড়িয়ে আছেন পৌরব রাজ্যের রাজা পুরু তাঁর সেনাবাহিনী নিয়ে। কথা আছে সম্রাটের বিরুদ্ধে রাজা পুরুর সঙ্গে যোগ দেবেন কাশ্মীরের রাজা অভিসার।
রাজা পুরুর হস্তী বাহিনীর পঁচাশিটা হাতির গায়ের অচেনা গন্ধে আলেকজাণ্ডারের বাহিনীর ঘোড়াগুলো নৌকা থেকে লাফ মেরে পালাতে শুরু করেছে ততক্ষণে। ঘোড়াগুলো এর আগে কখনো এই রকম শুঁড়ওয়ালা এত বিশাল জানোয়ার দেখে নি। ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল সম্রাটের অশ্বারোহী বাহিনী।
কিন্তু হাল ছেড়ে দেন নি আলেকজান্ডার। তারপর কৌশলে রাজা পুরুকে ধোঁকা দিয়ে রাতের অন্ধকারে ঝিলাম পার হয়ে আক্রমণ করেছেন সম্রাট। তার পরের কাহিনী তো সকলের জানা।
অন্য দিকে সম্রাটের অন্য এক ছবি ফুটে উঠেছে তাঁর সঙ্গীদের লেখা বিবরণে। হাতি হয়ে উঠেছে তাঁর অতি প্রিয়। হাতির মুখকে শিরোভূষণ করেছেন সম্রাট। তাঁর মুদ্রাতে খোদাই করিয়েছেন হাতির চামড়া দিয়ে তৈরী শিরস্ত্রাণের উপরে হাতির মুণ্ড দেওয়া নিজের মুখের ছবি।
সেই ইতিহাসের মধ্যে রয়ে গেছে হাতি ও তার মুণ্ড শোভিত দেবতার পূজার কথা।
আফগানিস্তানের কপিশা নগরে পিলুসার নামে হস্তিমুখ দেবতার পূজা আর পরবর্তী কালে বিভিন্ন ভাবে পুরাতত্ত্ববিদদের উদ্ধার করা ওই অঞ্চলের হস্তিমুখ দেবতার মূর্তি থেকে খুঁজে পাওয়া ইতিহাস আমাদের জানিয়ে দেয় সেই দেবতার কথা।
ব্রাহ্মণ্য ধর্ম বৌদ্ধধর্ম ছাড়াও অন্য ধর্মে তন্ত্রসাধনা যেমন শুরু হয়েছিল সেই রকমই ভারতবর্ষের সর্বত্র সেই কৃষ্ণ বাসুদেব আর গজাননের পূজা ছড়িয়ে পড়া আর তাঁদের তন্ত্রসাধনা ও ইতিহাসের কাহিনী রয়েছে 'সাম্বালা - তন্ত্রের আলোয়' বইয়ের তৃতীয় খণ্ডে।।
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি