কীর্তনখোলার পারে
সজল দাশগুপ্ত
প্রচ্ছদশিল্পী : শান্তনু মিত্র
'কেমন এক পরিচ্ছন্ন বাতাস ভেসে আসে।
অঘ্রান রাত্রির অগণন জ্বলন্ত নক্ষত্রের আলোয়
সমস্ত পৃথিবী তার জলঝর্ণার— নগ্ন নারীহস্তের নির্মলতায়
নিঃশব্দে উৎসারিত হয়ে উঠেছে আজ।’
—জীবনানন্দ
এ কাহিনির আদিতেই এক নদী। সে নদী এ কাহিনির আত্মা। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতার সেই বিখ্যাত পঙ্ক্তি, ‘তারপর যেতে যেতে এক নদীর সঙ্গে দেখা।’ হয়ে যায় তো তেমন দেখা। চলতি পথে, আচমকা, কোনও অরণ্যের সঙ্গে, কোনও পাহাড়ের সঙ্গে অথবা কোনও নদীর সঙ্গে। কিন্তু এ নদীর সঙ্গে তেমন চলতি পথে হঠাৎ দেখা নয়। এ নদী অনাদি, অনন্ত অতীত থেকে উৎসারিত। এবং অনন্ত নৈঃশব্দ্যে এর সঙ্গে একীভূত হওয়া— ‘সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম তজ্জলানিতি শান্ত উপাসীত…’ এই সব কিছুই ব্রহ্ম, কারণ সমস্ত কিছু তাহা হইতেই উৎপন্ন হয়। সবারই জীবনসায়াহ্নের এই অমোঘ উপলব্ধিও এই নদীর কাছ থেকেই এক প্রাপ্তি। জীবনচর্যার চিরন্তন সৌষ্ঠব বলতে তাই এই নদী। এ নদী নির্জনে বইছে অনন্তকাল। এ নদীর নাম কীর্তনখোলা।
কীর্তনখোলার স্টিমারঘাটা থেকে বেরোলেই এক পাকা সড়ক— সদর রোড। সদর রোড থেকে বেরোলেই আর এক পাকা সড়ক চলে গেছে পশ্চিমে। সেটা যেতে যেতে যেতে এসে ঠেকল ব্রজমোহন কলেজের দোরগোড়ায়। ব্রজমোহন কলেজ মানেই এক নিবিড় উপলব্ধি, ‘আবার আসিব ফিরে’র এক অমোঘ আকাঙ্ক্ষা। কবি জীবনানন্দ। জীবন এখানে প্রতিদিন প্রত্যুষে অপেক্ষা করে দীর্ঘায়িত হতে।
বাঁদিকে একটা সরু পথ। সে পথ ধরে হেঁটে চললে ঠোক্কর খেতে হবে সবুজ ঘাসের কম্পাউন্ডে দাঁড়িয়ে থাকা এক খণ্ড মেঘের মতো দুধসাদা এক বাড়ির ফটকে। সেখানে গেটের মুখে শ্বেতপাথরের ফলকে ছোট্ট করে লেখা, ‘কনকভবন’। এ কাহিনি সেই কনকভবন থেকে বেরোবে অনেকগুলো সময়ের ধাপ পিছিয়ে গিয়ে একেবারে চল্লিশের দশকে।...
প্রবেশ করুন বা রেজিস্টার করুনআপনার প্রশ্ন পাঠানোর জন্য
কেউ এখনো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি